এসটি নিউজ: নারায়ণগঞ্জ আড়াইহাজারে বহুল আলোচিত কিশোরী গণধর্ষণ ঘটনায় জড়িত ০৪ ধর্ষক গ্রেফতার র্যাব-১
সোমবার (২০ মে) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান র্যাব ১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা।
গত ১৫ মে ২০২৪ তারিখ রাত আনুমানিক ০২.৩০ ঘটিকায় নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার এলাকায় ১৭ বছরের এক কিশোরীকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে। উক্ত ঘটনায় ভিকটিম বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে আড়াইহাজার থানায় অজ্ঞাতনামা ৫/৬ জনকে আসামি করে একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন।
গণধর্ষণের ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারিত হলে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। বর্ণিত গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে র্যাব।
এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১১ এর একটি অভিযানিক দল নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে চাঞ্চল্যকর গণধর্ষণের মূলপরিকল্পনাকারী ১। মোঃ আব্দুল্লাহ (২৪), পিতাঃ দেলোয়ার হোসেন, আড়াইহাজার, নারায়ণগঞ্জ ও তার সহযোগী ২। মোঃ মতিন (৩৫), পিতাঃ মৃত মনসুর আলী, মাধবদী, নরসিংদী, ৩। চাঁন মিয়া (২৮), পিতাঃ আঃ রহিম মিয়া, আড়াইহাজার, নারায়ণগঞ্জ ও ৪। মোঃ আয়নাল (২৫), পিতাঃ মফিজ উদ্দিন, আড়াইহাজার, নারায়ণগঞ্জ, ’দেরকে গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধার করা হয় ভিকটিমের মোবাইলসহ ০১টি দেশীয় তৈরী ওয়ান শুটার গান, ০১টি শাবল, ০১টি দা, ০২টি রামদা ও ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত সিএনজি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা উক্ত গণধর্ষণের সাথে তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেফতারকৃতরা সংঘবদ্ধ একটি ডাকাত চক্র এবং চক্রের মূলহোতা গ্রেফতারকৃত আব্দুল্লাহ। এই চক্রে ১০/১২ জন সদস্য রয়েছে। গ্রেফতারকৃত আব্দুল্লাহ এর নের্তৃত্বে তারা ১/২ বছর যাবৎ নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি করে আসছিল বলে জানা যায়। গ্রেফতারকৃতরা গত ১৫ মে ২০২৪ তারিখ রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে ডাকাতির উদ্দেশ্যে ভিকটিমের বাড়িতে যায়। সেসময় গ্রেফতারকৃত আব্দুল্লাহ ও গ্রেফতারকৃত মতিন ঘরের জানালা ভেঙ্গে ঘরের ভিতরে প্রবেশ করে। এসময় ভিকটিম ও তার মায়ের ঘুম ভেঙ্গে গেলে তারা ভয়ে চিৎকার করলে গ্রেফতারকৃতরা তাদেরকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রাখে। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃতরা ঘরের দরজা খুলে দিলে গ্রেফতারকৃত চাঁন মিয়া ও গ্রেফতারকৃত আয়নালসহ অন্যান্য সহযোগীরা দেশিয় অস্ত্রসহ ঘরে প্রবেশ করে ভয়ভীতি দেখিয়ে ভিকটিমের মা সহ ঘরে উপস্থিত সকলের হাত,পা ও মুখ বেধে ফেলে। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃতরা ঘরের ভিতর মূল্যবান জিনিসপত্র না পেয়ে ক্ষোভে গ্রেফতারকৃতরা ভিকটিমকে হাত-পা বাধাঁ অবস্থায় তাদের বাড়ির পাশে একটি ফাঁকা ঘরে নিয়ে যায়। সেখানে গ্রেফতারকৃতরা ভিকটিমের মুখ ওড়না দিয়ে পেচিয়ে জোরপূর্বক পালাক্রমে গণধর্ষণ করে ভিকটিমকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় রেখে গ্রেফতারকৃতরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। এসময় গ্রেফতারকৃতরা এই ঘটনা সম্পর্কে কাউকে জানালে ভিকটিম ও তার পরিবারকে হত্যা করবে বলে হুমকি প্রদান করে। পরবর্তীতে ভিকটিম উক্ত ঘটনায় মামলা দায়ের করলে গ্রেফতারকৃতরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেফতার এড়াতে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে।
গ্রেফতারকৃত আব্দুল্লাহ এই ডাকাত চক্রের মূলহোতা। সে পূর্বে একটি স্পিনিং মিলে চাকুরির সময় থেকে ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে চাকুরি ছেড়ে দিয়ে ডাকাত চক্রটি গড়ে তুলে। সে ডাকাতি পেশাকে আড়াল করার জন্য ছদ্মবেশে বিভিন্ন সময় নারায়ণগঞ্জের ভ‚লতা-গাউসিয়া এলাকার বাসের হেলপার ও রিক্সা চালাত।
গ্রেফতারকৃত মতিন গ্রেফতারকৃত আব্দুল্লাহর অন্যতম সহযোগী। সে ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। সে ডাকাতি পেশাকে আড়াল করার জন্য ছদ্মবেশে সিএনজি চালাত। সিএনজি চালিয়ে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতির জন্য টার্গেট নির্ধারণ করে ডাকাতির পরিকল্পনা গ্রেফতারকৃত আব্দুল্লাহকে প্রদান করতো। এছাড়াও সে তার সিএনজি দিয়ে ডাকাতির পূর্বে চক্রের অন্যান্য সদস্যদের ডাকাতির জন্য নির্ধারিত স্থানে নিয়ে যেত এবং ডাকাতি শেষে চক্রের সদস্যদের সুবিধাজনক স্থানে দ্রæত পৌঁছে দিত। তার বিরুদ্ধে নরসিংদীর মাধবদী থানায় অস্ত্র, ডাকাতি ও বিস্ফোরক দ্রব্য সংক্রান্ত ০৩টি মামলা রয়েছে।
গ্রেফতারকৃত চাঁন মিয়া ও আয়নাল ডাকাত চক্রের অন্যতম সদস্য। তারা ডাকাতি পেশাকে আড়াল করার জন্য ছদ্মবেশে যথাক্রমে বাস ও সিএনজি চালাত। তারা গ্রেফতারকৃত আব্দুল্লাহর নের্তৃত্বে ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড করতো। গ্রেফতারকৃত চাঁন মিয়ার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের জোরারগঞ্জ থানায় অস্ত্র, ডাকাতি ও চুরি সংক্রান্ত ০৩টি মামলা রয়েছে এবং এসকল মামলায় কারাভোগ করেছে বলে জানা যায়। গ্রেফতারকৃত আয়নাল এর বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানায় বিস্ফোরক দ্রব্য ও আইন-শৃঙ্খলা বিঘœকারী অপরাধ সংক্রান্ত ০১টি মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।